শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৯

শিশুজন্মে অস্ত্রোপচারের ব্যবহার ভয়াবহ গতিতে বাড়ছে



স্বাস্থ্য ডেস্ক-১৮ অক্টোবর ২০১৯: অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দেশে বছরে ৫ লাখ ৭১ হাজারের বেশি শিশুর জন্ম হচ্ছে । বছর বছর শিশুজন্মে অস্ত্রোপচারের ব্যবহার বাড়ছে। ক্ষতিকর এই প্রবণতা রুখতে আইন প্রণয়নসহ সরকারি, বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, প্রসূতিরোগ বিশেষজ্ঞ, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা, আইনজীবী ও এনজিও প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার রাজধানীতে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ এর সহায়তায় ‘স্বাভাবিক প্রসবে উদ্বুদ্ধকরণ ও অপ্রয়োজনীয় সিজারিয়ান সেকশন বন্ধে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো।
বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক অনেক গভীর উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের সঙ্গে সংগতি রেখে সরকার বেশ কয়েকটি কার্যপরিকল্পনা (অপারেশন প্ল্যান) তৈরি করেছে। এসব পরিকল্পনায় স্বাভাবিক প্রসব বাড়ানোর পন্থার কথা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিতভাবে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, অস্ত্রোপচারে প্রসবের বিরূপ প্রভাব পড়ে নবজাতকের ওপর। বিএমডিসি আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত হলে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে বিএমডিসি।
শিশুজন্মে অস্ত্রোপচারের ভূমিকা ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক মান্নান। তিনি বলেন, দেশে বছরে ১০ লাখ শিশুর জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারে। এর মধ্যে ৫ লাখ ৭১ হাজারের বেশি প্রসবে অস্ত্রোপচারের কোনো প্রয়োজন হয় না। অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের বড় অংশটি হয় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। এসব অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের কারণে মানুষের পকেট থেকে বছরে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি বের হয়ে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাতৃ, নবজাতক, শিশু ও কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্য কর্মসূচির বিষয়ভিত্তিক পরিচালক মো. শামসুল হক বলেন, এখনো প্রায় অর্ধেক শিশুর জন্ম হচ্ছে বাড়িতে। অন্যদিকে ৫৪ শতাংশ মাতৃমৃত্যু হচ্ছে রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনিতে। সরকার ৪২৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি প্রসূতিসেবা, ১৩২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সব জেলা হাসপাতাল ও সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সমন্বিত জরুরি প্রসূতিসেবা চালু করেছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মনজুর হোসেন বলেন, সেবা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা তৈরির জন্য সবাইকে যত্নবান হতে হবে।
বাংলাদেশে প্রায় অর্ধেক মায়ের মৃত্যু হচ্ছে গ্রামে, এই তথ্য দিয়ে মাতৃস্বাস্থ্য কর্মসূচির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মো. মোশায়ের-উল-ইসলাম বলেন, মুক্তাগাছা, ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাভাবিক প্রসব বেশি হচ্ছে। এদের অভিজ্ঞতার বিস্তার হওয়া দরকার।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান শামস এল আরেফিন বলেন, এমন ধারণাও কিছু মানুষের মধ্যে আছে যে অস্ত্রোপচারে শিশু জন্ম দেওয়াই হচ্ছে স্বাভাবিক ঘটনা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন